সপ্তম শ্রেণীঃ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি | দ্বিতীয় অধ্যায় | রচনামূলক প্রশ্ন ও উত্তর
শ্রেণি: সপ্তমপ্রথম দ্বিতীয় অধ্যায়
১. র্যাম (RAM) ও রম (ROM) এর পার্থক্য লিখ।
ভূমিকা: কম্পিউটারে তথ্য সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণে ব্যবহৃত গুরুত্বপূর্ণ দুটি মেমোরি হলো RAM এবং ROM। এদের কাজ, ধরন ও ব্যবহার একে অপরের থেকে আলাদা। এই দুই ধরনের মেমোরির পার্থক্য জানা তথ্যপ্রযুক্তির বুনিয়াদি বিষয়।
র্যাম (RAM) ও রম (ROM) এর পার্থক্য
১. পূর্ণরূপ (Full Form) গত পার্থক্য:
RAM এর পূর্ণরূপ: Random Access Memory অন্যদিকে, ROM এর পূর্ণরূপ: Read Only Memory
২. তথ্য সংরক্ষণের ধরন:
RAM অস্থায়ী মেমোরি। বিদ্যুৎ বন্ধ হলে এর তথ্য মুছে যায়। অন্যদিকে, ROM স্থায়ী মেমোরি। বিদ্যুৎ বন্ধ হলেও এর তথ্য থাকে।
৩. তথ্য লেখার নিয়ম:
RAM-এ তথ্য পড়া ও লেখা দুটোই যায়। কিন্তু ROM-এ শুধু পড়া যায়, লেখা যায় না বা সীমিতভাবে যায়।
৪. কাজের ধরন:
RAM কম্পিউটারে কাজ করার সময় অস্থায়ী তথ্য রাখে, যেমন সফটওয়্যার চালানোর সময়। অন্যদিকে, ROM কম্পিউটার চালু হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় প্রোগ্রাম সংরক্ষণ করে রাখে (যেমন BIOS)।
৫. গতি:
RAM অনেক দ্রুত কাজ করে এবং তথ্য গ্রহণ-বিতরণে দক্ষ। অপরদিকে, ROM তুলনামূলক ধীর গতিতে তথ্য পড়ে।
৬. ব্যবহার:
RAM সাধারণত ব্যবহারকারী যখন কম্পিউটারে কাজ করে, তখন ব্যবহৃত হয়। অন্যদিকে, ROM কম্পিউটার চালু হতেই কাজ শুরু করে এবং সিস্টেম চালু রাখতে সাহায্য করে।
৭. পরিবর্তনযোগ্যতা:
RAM-এর তথ্য ব্যবহারকারী ইচ্ছেমতো পরিবর্তন করতে পারে। অপরপক্ষে, ROM-এর তথ্য সাধারণত পরিবর্তন করা যায় না বা খুব সীমিতভাবে যায়।
উপসংহার:
RAM ও ROM উভয়ই কম্পিউটারের গুরুত্বপূর্ণ মেমোরি। তবে RAM মূলত অস্থায়ীভাবে তথ্য ধরে রাখে এবং কাজের গতি বাড়ায়, আর ROM কম্পিউটারের শুরুর প্রক্রিয়া বা বুটিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় স্থায়ী তথ্য সংরক্ষণ করে। RAM বেশি থাকলে কম্পিউটার দ্রুত কাজ করে, আর ROM ছাড়া কম্পিউটার চালু হতে পারে না।
২। ইনপুট ডিভাইস এবং আউটপুট ডিভাইস উদাহরণসহ বর্ণনা কর।
ভূমিকা: কম্পিউটার আমাদের কাছ থেকে তথ্য গ্রহণ করে এবং প্রক্রিয়া শেষে ফলাফল দেয়। এই প্রক্রিয়ায় ইনপুট ও আউটপুট ডিভাইস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই ডিভাইসগুলো ছাড়া কম্পিউটারে কার্যকরভাবে কাজ করা সম্ভব নয়।
১. ইনপুট ডিভাইস:
ইনপুট ডিভাইস হলো এমন ডিভাইস, যেগুলোর মাধ্যমে আমরা কম্পিউটারে তথ্য বা নির্দেশনা পাঠাই।
ইনপুট ডিভাইসের উদাহরণ:
১. কীবোর্ড
২. মাউস
৩. টাচস্ক্রিন
৪. স্ক্যানার
৫. মাইক্রোফোন
৬. ওয়েবক্যাম
৭. জয়স্টিক
৮. বারকোড রিডার
৯. ট্র্যাকপ্যাড
১০. ডিজিটাল ক্যামেরা
৪. আউটপুট ডিভাইস:
আউটপুট ডিভাইস হলো এমন ডিভাইস, যেগুলোর মাধ্যমে কম্পিউটার থেকে আমরা ফলাফল বা তথ্য দেখতে বা শুনতে পারি।
আউটপুট ডিভাইসের উদাহরণ:
১. মনিটর
২. প্রিন্টার
৩. স্পিকার
৪. প্রজেক্টর
৫. হেডফোন
৬. LED ডিসপ্লে
৭. স্মার্টবোর্ড
৮. প্লটার
উপকারিতা:
ইনপুট ডিভাইস ব্যবহার করে ব্যবহারকারী সহজেই কম্পিউটারে তথ্য প্রদান করতে পারে, আর আউটপুট ডিভাইস প্রক্রিয়ার ফল দেখায়।
উন্নত প্রযুক্তি:
বর্তমানে অনেক ডিভাইস যেমন টাচস্ক্রিন, ইনপুট ও আউটপুট উভয় কাজ করে।
বৈচিত্র্য ও প্রয়োগ:
বিভিন্ন কাজের জন্য বিভিন্ন ইনপুট ও আউটপুট ডিভাইস ব্যবহৃত হয় যেমন: ডিজাইন, গেমিং, অফিস ও শিক্ষায়।
উপসংহার: ইনপুট ও আউটপুট ডিভাইস কম্পিউটার ব্যবহার সহজ করে তোলে। এগুলোর সঠিক ব্যবহার আমাদের কাজকে গতিশীল ও ফলপ্রসূ করে তোলে।
৩। কম্পিউটারের মস্তিষ্ক কোনটি? এর সংগঠন সম্পর্কে বর্ণনা কর।
ভূমিকা: যেমনভাবে মানুষের সব সিদ্ধান্ত মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রণ করে, তেমনি কম্পিউটারে সব তথ্যপ্রক্রিয়ার কেন্দ্র হল প্রসেসর বা CPU। এটি কম্পিউটারের ‘মস্তিষ্ক’ হিসেবে পরিচিত। নিচে CPU এর সংগঠন সম্পর্কে বর্ণনা করা হলো।
১. CPU-এর পূর্ণরূপ ও পরিচয়:
CPU-এর পূর্ণরূপ হলো Central Processing Unit। এটি কম্পিউটারের প্রধান কাজের ইউনিট, যা সব তথ্য গ্রহণ করে, প্রক্রিয়া করে এবং ফলাফল তৈরি করে।
২. CPU কেন মস্তিষ্ক:
CPU কম্পিউটারের সকল কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। এটি ইনপুট ডেটা গ্রহণ করে, প্রক্রিয়া করে এবং আউটপুট তৈরি করে। ঠিক যেমন মানুষ মস্তিষ্ক দিয়ে চিন্তা করে, তেমনি CPU কাজ করে।
৩. সংগঠন:
CPU মূলত তিনটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়ে গঠিত, যেগুলো একসাথে কাজ করে—
ক. ALU (Arithmetic Logic Unit): এটি গাণিতিক যেমন যোগ-বিয়োগ এবং যৌক্তিক যেমন তুলনা করার কাজ করে।
খ. CU (Control Unit): এই ইউনিট কম্পিউটারের বিভিন্ন অংশকে নির্দেশনা দেয় এবং সঠিকভাবে কাজ করতে সাহায্য করে।
গ. Register (রেজিস্টার): এটি একধরনের ছোট ও দ্রুত মেমোরি, যেখানে অস্থায়ীভাবে তথ্য রাখা হয় যাতে CPU তা দ্রুত ব্যবহার করতে পারে।
৪. CPU ছাড়া কম্পিউটার অচল:
CPU ছাড়া কম্পিউটার শুধু একটি বাক্সের মতো, কারণ এটি না থাকলে কোনো নির্দেশনা, হিসাব বা আউটপুট তৈরি হয় না।
উপসংহার: CPU হচ্ছে কম্পিউটারের প্রধান ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এর প্রতিটি উপাদান একসাথে কাজ করে কম্পিউটারকে বুদ্ধিমান ও কার্যকর করে তোলে। তাই CPU-কে কম্পিউটারের মস্তিষ্ক বলা হয়। CPU-এর দক্ষতা যত ভালো, কম্পিউটারের পারফরম্যান্সও তত ভালো।
Comments
Post a Comment